খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার বাণিজ্যিক রুট হিসেবে পরিচিত ছিল বেতনা নদী।এক সময় বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা নদীপথে সাতক্ষীরা শহরে আসতেন বাণিজ্য করতে। কিন্তু পলি জমে ও দখলের কারণে নদীটি ভরাট হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বাণিজ্যিক রুটটি। পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ২০২২ সালে নদীটির খনন শুরু হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না বলে মনে করেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মাটি কেটে রাখা হচ্ছে নদীপাড়েই। এখন চলছে বর্ষা মৌসুম। ফলে বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার নদীতে পড়ে ভরাট হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, একের পর এক হাতবদলের কারণে নদী পুনর্খননকাজ দায়সারাভাবে করা হচ্ছে। একেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছুদিন কাজ করার পর টাকা নিয়ে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে আসে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এভাবে একের পর এক হাতবদল হওয়ায় কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দ্রুত গতিতে কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাজের অনুকূলে ৪৮ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমরা কাজটি নিয়েছি কিছুদিন হলো। এর আগে আক্কাস আলী নামে এক ঠিকাদার কাজ করছিলেন। তবে তিনি কাজ রেখে চলে যান। পরবর্তী সময়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের দায়িত্বে দিয়েছে। দ্রুতই কাজ শেষ করব বলে আশা করছি।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার হাজিপুর থেকে কলারোয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার নদী খনন করা হচ্ছে। পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদকে ২০২২ সালের ৩০ জুন কার্যাদেশ দেয়া হয়। ১০ মাস মেয়াদি প্রকল্পকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২১ জুন। ১০ মাসের পরিবর্তে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি।
নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে বেতনা নদী পুনর্খননে অনিয়ম করছেন।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঠিক বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে নদী খনন শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেই বর্ষা চলে আসে, তখন কাজ বন্ধ রাখা হয়। প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থও দেয়া হয়েছে কাজের অগ্রগতি বিবেচনা না করে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি সাতক্ষীরায় সদ্য যোগদান করেছি। বেতনা নদী পুনর্খননে কোনো অনিয়ম হলে সেটা মেনে নেয়া হবে না। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
0 coment rios: