শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে মেধাবী ছাত্র হাবিব অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না ।

 


মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের সিদ্দিকা বেগমের ছেলে হাবিব, মায়ের হাড়ভাংগা খাটুনির আয়ে চালিয়েছেন পড়াশোনা। শিশুকালে হারিয়েছেন বাবা, নিজেও করিয়েছেন টিউশনি, কখনও শ্রমিক আবার কখনও দিনমজুরির কাজ। অভাব-অনটন আর সব বাধা ডিঙিয়ে নিজের স্বপ্ন থেকে পিছপা হননি । এবার ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে অর্থের অভাবে অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার ভর্তি হওয়া। ছেলের দুই চোখ ভরা স্বপ্ন থাকলেও মায়ের সময় কাটছে পাহাড়সম দুশ্চিন্তায়।  

বয়স যখন সবেমাত্র ৫ বছর তখনই বাবা হারিয়েছেন আহসান হাবীব। এরপর থেকে মাসহ ঠাঁই হয়েছে নানার বাড়িতে। নানার অভাবের সংসারে পাননি তেমন কোন সুযোগ সুবিধা। তাদের বসতভিটা ছাড়া নেই কোনও আবাদি জমি। অন্যের জমিতে কাজ করেই দিনাতিপাত করতে হয়। সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তা করে দিনরাত হাড়ভাংগা পরিশ্রম করছেন হাবীবের মা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেও মায়ের সাথে মাঠে কাজ করেছে হাবীব।  যখন থেকে নিজেকে বুঝতে শুরু করেছে হাবীব তখন থেকে দেখছেন অবিরত মায়ের ছুটে চলা। মায়ের কষ্ট লাঘবে দুইচোখ ভরা স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বিসিএস ক্যাডার হবার। এবারে দেশের প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে হাবীব। তবে ভর্তি হবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে তার মা, সেখানে এত পরিমাণ টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের সিদ্দিকা বেগমের সন্তান আহসান হাবীব। বাড়ির পাশে জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আহসান হাবীবের এমন অর্জনে যখন আশপাশের  মানুষদের মাঝে প্রশংসার ফুলঝুরি, অন্যদিকে দিনরাত পরিশ্রম করেও টাকার জোগান দিতে পারছেন না তার মা। আহসান হাবীবের মা সিদ্দিকা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে নিজে বাবা ও মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন তার মা। নিজে পরিশ্রম করে সন্তানদের চাহিদা মেটাতে পারেননি। তবুও সন্তানের এমন অর্জনে খুশি তিনি। তবে ভর্তির জন্য টাকার অভাবে দুশ্চিন্তায় সময় পার হয় আহসান হাবীবের মায়ের। সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।  বিশ্ববিদ্যালয় চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আহসান হাবীব বলেন,ছোটবেলা থেকে অভাবের সাথে বোঝাপড়া করে বড় হয়েছেন আহসান হাবীব। মাঝেমধ্যে নিজে কাজ করলেও মায়ের পরিশ্রমের ফসলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও যা অনেকটাই অনিশ্চিত তার। তবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলে বিসিএস ক্যাডার হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণের আশা তার। 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: