বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

সুন্দরবনে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করে ফিরল মৌয়াল

 


খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের গহীনে ঢুকে মধু কাটার পর নদীতে গোসল করতে গিয়ে কুমিরের আক্রমনে গুরুতর আহত হয়েছে আব্দুল কুদ্দুস সানা (৫৫) নামের এক মৌয়াল। কুমিরের সাথে রিতিমত যুদ্ধ করে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে সে। গত শনিবার (১১ মে) সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া নদীতে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১৪ মে) লোকালয়ে ফিরে আসার পর তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কুমিরের কামড়ে আব্দুল কুদ্দুস এর বাম হাতে গুরুতর জখম হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে সুন্দরবনের বাঘের কবলে পড়েন আব্দুল কুদ্দুসসহ ৭ জনের একটি মৌয়াল দল। সেসময় বাঘের আক্রমনে আহত হয় মৌয়াল কুদ্দুস।

কুমিরের আক্রমনে আহত আব্দুল কুদ্দুস সানা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের মৃত মোকছেদ আলী সানার ছেলে।

তার সঙ্গী অন্যান্য মৌয়ালরা জানান, গত ৭-৮ দিন আগে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু সংগ্রহের পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে সুন্দরবনে ঢোকেন আব্দুল কুদ্দুসসহ ছয় মৌয়াল। তাদের মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস ও আব্দুল হালিম আপন দুই সহোদর। গত ১১ মে সুন্দবনের গহীনে তারা অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি মধুর চাক পেয়ে তা ভাঙার পর দুপুর আড়াইটার দিকে কলাগাছিয়া নদীতে গোসল করতে নামেন। এক পর্যায়ে নদীর হাঁটুপানিতে নেমে গোসল করার সময় হঠাৎ আব্দুল কুদ্দুসকে পানির মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখেন অন্যরা। আকস্মিক এ ঘটনায় সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এসময় তারা পানিতে রক্ত ভেসে উঠতে দেখেন। এর কিছুক্ষ পর তার ভাই হালিমসহ অন্যরা পানির উপরে কুমিরের লেজ ভাসতে দেখে বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের হাতে থাকা মগ ও পাতিল নিয়ে সজোরে পানিতে আঘাত করতে থাকেন। এরপর তারা আব্দুল কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি শুরু করেন। এভাবে টানা চার মিনিট টানাটানির একপর্যায়ে হঠাৎ শিকার ছেড়ে নদীতে চলে যায় কুমিরটি।

ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে আব্দুল কুদ্দুস জানান, কুমির যখন তার হাত কামড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। কুমির ঘুরপাক খেতে থাকায় তিনিও সমানতালে পানিতে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পারায় এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন-সংরক্ষক (এসিএফ) এ.কে.এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে মৌয়ালদের বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। বৈধভাবে যেসব মৌয়াল মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণীর কবলে পড়ে হতাহত হন তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে সরকারি সহায়তার জন্য নাম প্রস্তাব করা হয়।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: