মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪

মোহাম্মদপুর এক তরুণীকে শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে ধর্ষণঃ গ্রেফতার ৪

 


আফজাল হোসেন শান্ত, স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার ননবীনগর হাউজিংয়ের একটি ভবন থেকে শিকলবন্দী অবস্থায় এক তরুণীকে উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর কলে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। এবিষয় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে মাসুদ নামে এক আইনজীবীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। তার অনুপস্থিতিতে সান নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর কারণে আইনজীবী মাসুদ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।


এর প্রতিশোধ নিতে টাকার প্রলোভণ দেখিয়ে সান ও তার বন্ধুদের দিয়ে এই তরুণীকে শিকলে বেঁধে পৈচাশিকভাবে শারীরিক ও যৌণ নির্যাতন চালানো হয়। এতে সহযোগিতা করেন সালমা নামে এক নারী। তিনি নির্যাতন ও বিকৃত যৌনাচারের ভিডিও ধারণা করে বিদেশে অবস্থানরত মাসুদের কাছে পাঠাতেন।


তরুণীকে বন্দি অবস্থায় ধর্ষণ, নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ভুক্তভোগী তরুণীর বর্তমান প্রেমিক সান ও তার দুই বন্ধু হিমেল, রকি এবং সালমা ওরফে ঝুমুর। গতকাল রবিবার রাতভর টানা অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 


সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।


ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাবা মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকতেন। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক আইনজীবী সঙ্গে পরিচয় হয়। আইনজীবী মাসুদের সঙ্গে লিভটুগেদার করত। সে বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকত। সে দেশে আসলে মেয়ের সঙ্গে থাকত। পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। এক পর্যায়ে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন ওই তরুণী। যার সকল খরচ বহন করতেন মাসুদ। পরে ঝুমুরের মাধ্যমে সান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মাসুদ। 


পরবর্তীতে মাসুদ ভুক্তভোগী তরুণীকে শায়েস্তা করতে তার বর্তমান প্রেমিক সানের সঙ্গে হাত মেলায়। সালমাকে দিয়ে তাদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাসুদের নির্দেশনায় কাজ করায়। তরুণীর রুমে বসানো হয় গোপনীয় ন ক্যামেরা। বিভিন্ন সময় সান ও তার বন্ধু হিমেল ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার দৃশ্য গোপনে ধারণ করে পাঠানো হতো মাসুদের কাছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এভাবে ভিডিও পাঠানো হতো।


ডিসি তেজগাঁও আরও বলেন, গোপনে ভিডিও করার বিষয়টি ভুক্তভোগী তরুণী জেনে যাওয়ায় তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। শুরু হয় শেকলে বেঁধে নির্যাতন। হাত-পা ও মুখ বেঁধে পৈচাশিক নির্যাতন চালাতেন সান ও তার বন্ধুরা। যার প্রতিটি মুহূর্ত ভিডিও ধারণ করে পাঠানো হতো মাসুদের কাছে। 


২৫ দিন পর যেভাবে বন্দীদশা থেকে উদ্ধার; ডিসি আজিম বলেন, গত ২৯ তারিখ রাত ৯টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর কলের মাধ্যমে ভুক্তভোগী তরুণীকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তরুণীকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়। ভুক্তভোগী তরুণী ঘুমিয়ে গেলে বাহিরে যায় সালমা, সান ও অন্যরা। কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগীর ঘুম ভেঙ্গে গেলে  বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে চিৎকার দিলে পথচারীরা ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশকে জানায়। পুলিশ গিয়ে নবীনগরের একটি বহুতল ভবনের চারতলা থেকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। 

 ডিসি তেজগাঁও আজিমুল হক বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীকে নির্যাতনের বেশিরভাগ ভিডিও ও ছবি সালমার মোবাইলে। কিন্তু সে মোবাইলটি লুকিয়ে ফেলেছে। তাই সেটি পেলে পৈচাশিক নির্যাতনের আসল তথ্য ও ভিডিওর গন্তব্য সম্পর্কে জানা যাবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: