সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে নদীর জলোচ্ছ্বাসের ধারগুলোতে ধান চাষাবাদ, শুকিয়ে গেছে ১১ নদী পানি ।


মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,দিনের পর দিন ঠাকুরগাঁও জেলার নদীতে পানি প্রবাহ শুধুই কমছে। শুকিয়ে গেছে অনেক নদী পানি । পানিতে স্রোত না থাকায় এসব নদীর বুকে জেগেছে বালুচর। অনেকে আবার নদীর জলোচ্ছ্বাসের ধারগুলোতে  বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার টাংগন, সেনুয়া, ভুল্লী, ঢেপা, শুক সহ ঠাকুরগাঁও জেলার মোট ১১টি নদী আছে। যার প্রত্যেকটিরই অবস্থাই খারাপ। বেশিরভাগ নদীর জলোচ্ছ্বাসের ধার গুলোতে  করা হচ্ছে বোরো ধানের চাষাবাদ। একটি সময় আশেপাশের মানুষ এসব নদ-নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

তবে পানি না থাকায় বর্তমানে মাছও কমে গেছে। এতে নদী তীরের মানুষের পেশাও বদলে গেছে।

স্থানীয় বোরো চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের চেয়ে নদীতে চুয়ে আসা পানি বোরো চাষে অনেক বেশি উপকারী। এতে সার, সেচ সহ সবকিছুতে সাশ্রয় হয়। এছাড়া নিজের আবাদি জমি না থাকায় চাষাবাদের জন্য অনেকে নদীর চরকে বেছে নিয়েছেন। টাঙ্গন নদীতে বোরো ধানের খেতে সেচ দিচ্ছিলেন  আলী। তিনি জানান, নদের বালুচরে আবাদ করায় খরচ কম লাগে। এখানে বোরো আবাদে পানির বাড়তি সেচ লাগে না। খুব বেশি সারও ব্যবহার করতে হয় না। অল্প খরচে সব কিছু করা সম্ভব। তাই নদীর  জলোচ্ছ্বাসের ধারগুলোতে  চাষাবাদ করা হচ্ছে।

 ফারুক নামের আরেকজন ধান চাষি বলেন, এখানে বোরো আবাদে পানির বাড়তি সেচ লাগে না। খুব বেশি সারও ব্যবহার করতে হয় না। যেটুকু ধান পাওয়া যায়, তাতে পরিবারের সবার চালের চাহিদা মিটে যায়।

শামসুল  নামের এক জেলে বলেন, এক এসব নদীতে প্রচুর পরিমাণে বোয়াল, গলদা, পাবদা, পুটিঁ, শোল, মাগুর, কৈ সহ দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আর পাওয়া যায় না। দিন দিন এভাবে নদীগুলো ভরাট হয়ে সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নদীগুলোই হারিয়ে যেতে বসেছে। সিরাজ নামের আরেক জেলে বলে, আগে নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যেত। ওই মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদীতে পানির অভাবে মাছ পাওয়া যায় না। ফলে পেশা পাল্টাতে হবে। সকাল থেকে জাল ফেলে ১ কেজি মাছও ধরা পড়েনি। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালিদুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের নদ-নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। এতে জীববৈচিত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। মাছ ও পাখির বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। মাছ বংশ বিস্তারের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না। এছাড়া চাষাবাদে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পাউবির নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার দুই-তিনটি নদ-নদী ছাড়া সবকটিই প্রায় পানিশূন্য। এসব নদ-নদীর বুকে অনেকেই ধান চাষ করছেন। জীববৈচিত্র রক্ষায় তাদের নদ-নদীর বুকে ধান চাষাবাদ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা যে দণ্ডনীয় অপরাধ, সে বিষয়েও সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও তাদের আটকানো যাচ্ছে না। ঠাকুরগাঁও শহরের সচেতন মানুষের দাবি অচিরেই নদীগুলো আবার খনন করে তার পূর্বের প্রমত্তা ফিরিয়ে দেয়া হোক। এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন জেলার সবাই।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: