শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪

কল ধরলেই তথ্য হ্যাক, বিষয়টি সঠিক নয়

শুধু ভয়েস কলে কথা বলার মাধ্যমে মুঠোফোনে এমন ‘ইটারসেপ্ট’ করা যায় না অথবা বিশেষ ধরনের নম্বর থেকে আসা কল রিসিভ করলে হ্যাকারের কাছে ফোনের সব তথ্য চলে যাওয়ার দাবি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।


বিষয়টিকে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক ছড়ানোর মতো কাজ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিমের (সার্ট) প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুল আলম খান।

গত ৮ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিওটি প্রকাশিত হয়। যেখানে এক ভুক্তভোগীর বরাতে বলা হয়, শুরুতে +৯২ অথবা +৯৯ যুক্ত কোন নম্বর থেকে আসা ফোন কল রিসিভ করলে, অথবা সেই নম্বরে কল ব্যাক করে কথা বললেই মোবাইলের যাবতীয় তথ্য চলে যাবে হ্যাকারের কাছে। শুধু তাই নয়, কোন ধরনের পিন শেয়ার না করলেও বিকাশ, নগদ, উপায়ের মতো মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) একাউন্টে থাকা অর্থও হাতিয়ে নিতে পারবেন হ্যাকাররা।

গতকাল শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ভিডিওটি রীতিমত ভাইরাল হয়ে যায়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ ব্যবহারকারী ভিডিও’টি দেখেছেন।

ভিডিওটি দেখে অনেক মোবাইল ব্যবহারকারী আতংকিত হয়ে পড়েন। বিদেশ থেকে আসা আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত জনদের কলও গ্রহণ করতে তারা দ্বিধায় পড়েন। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে আসা কলও অনেক ব্যবহারকারী ধরেননি বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ওই ভিডিওতে বলা হয়, এসব ফোন কলে হ্যাক হতে পারে হোয়াটস অ্যাপ বা ইনস্টাগ্রাম আইডিও। ফেসবুকের বিভিন্ন পাবলিক গ্রুপ, হোয়াটস অ্যাপ ও মেসেঞ্জারের বিভিন্ন গ্রুপ চ্যাটে ব্যবহারকারীদের এই ভিডিও নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে। তারা আতংকিত এবং বিভ্রান্ত হয়ে কোনো বিদেশি নম্বর থেকে আসা ফোন কল গ্রহণ করছেন না বলে জানাচ্ছেন।

তবে এমন দাবি সঠিক নয় বলে জানাচ্ছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা কালবেলাকে বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করছেন অপরিচিত নম্বর হতে কল ধরা প্রসঙ্গে। উত্তর হচ্ছে – না। কেউ যদি শুধু আপনার ফোন কল ধরার মাধ্যমে সব পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে পারত, তাহলে এটা খুবই বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি হতো। আসলে, এমন কোনো প্রমাণিত পদ্ধতি নেই যেখানে শুধু ফোন কল ধরার মাধ্যমে হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড চুরি করতে পারে। তবে, হ্যাকাররা বিভিন্ন প্রতারণামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে যেমন ফিশিং কল, যেখানে তারা বিশ্বাসযোগ্য সংস্থা বা ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে আপনার কাছ থেকে সরাসরি তথ্য চাইতে পারে।


আরেক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সাইবার৭১ এর পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, শুধু ফোন কলের মাধ্যমে মোবাইলের যাবতীয় তথ্য হ্যাক করার কোন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। এটা হওয়ার কথা না। এমনটা হলে হ্যাকার শুধু দুইটা কোডযুক্ত নম্বর থেকে কেন করবে? সে তো হাজারটা কোড বানাতে পারতো। আর এমন কোডযুক্ত নম্বর দিয়ে ফোন করলেই যদি সব হ্যাক করা যায়, তাহলে তো এতক্ষণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতো। এধরনের বিভ্রান্তিমূলক ভিডিও’র কারণে সাধারণ মানুষ আতংকিত হচ্ছে।


ভিডিও সম্পর্কে বিজিডি ই-গভ সার্টের প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম খান বলেন, এধরনের ভিডিও বিভ্রান্তি ছড়ায়। কেউ যদি এধরনের বিষয় জানতে পারেন তাহলে উচিত যথাযথ উপায়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো। কোনকিছু যাচাই না করেই এভাবে ভিডিও করা ঠিক হয়নি।


ভিডিও সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর কালবেলাকে বলেন, ভিডিওর বিষয়টি পুলিশের আইসিটি বিভাগ যাচাই বাছাই করে দেখছে। ভিডিওটা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বার্তা নয়। কিসের ভিত্তিতে ভিডিওটা করা হয়েছে এবং কোনো ভিত্তি ছাড়াই যদি করা হয়, সে বিষয়টিও দেখা হবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: