বদরুদ্দোজা প্রধান পঞ্চগড় প্রতিনিধি: নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব দেশের উত্তরের জনপদ পঞ্চগড় এর বিভিন্ন হাটবাজার। দিন দিন এই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বেড়েই চলছে এখানে। জেলার বাজার, শপিংমল থেকে শুরু করে গ্রামের ভেতর ছোট ছোট মুদি দোকানসহ বিভিন্ন কেনাকাটায় কোনভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না পলিথিন ব্যবহারে। এতে জনস্বাস্থ্যসহ মারাত্মক হুমকির মুখে জীববৈচিত্র।
জেলা শহরসহ পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাঁচাবাজার, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। একবার ব্যবহারের পর পলিথিন ব্যবহার শেষে সেগুলো ছুড়ে ফেলা হচ্ছে রাস্তা, ফুটপাত কিংবা ড্রেনে। যা পরিবেশকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার, উৎপাদন, বিপণন নিষিদ্ধ হলেও এর ব্যবহার রোধে কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
অভিযোগ উঠেছে গুটি কয়েক অসাধু পলেথিন ব্যবসায়ি সারা জেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে পলেথিন। এতে পরিবেশের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুকিঁতে পড়েছে সাধারন মানুষ ।
হাট বাজার সহ শহরে বাজার মুখী প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের হাতেই দেখা যাচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ। সবধরনের বাজার বহন করছে প্লাষ্টিকের তৈরী ছোট বড় ব্যাগে। দোকানদাররাও সবধরণের পন্য বিক্রী করছেন পলেথিনে।
সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা বলছেন একবার ব্যবহারের পর যেখানে সেখানেই ফেলে দেয়া হচ্ছে পলেথিন। পরিত্যক্ত এসব পলেথিন ভেঙ্গে মাইক্রো প্লাস্টিকে পরিণত হচ্ছে। ওই মাইক্রো প্লাস্টিক মাটি ও পানিতে মিশে বিভিন্ন সবজি, ফল ও প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করছে। তারপর প্লাস্টিকের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান খাবার এবং বাতাশের মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে মানবশরীরে । পলেথিনের কারণে কৃষি জমি হারিয়ে ফেলছে উর্বরতা। বিষাক্ত হয়ে উঠছে পরিবেশ। ক্যন্সার সহ নানা ধরনের ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন নিষিদ্ধ পলেথিন ব্যবহারে সাধারন মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। বেড়েছে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মহার । পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের এনেস্থিসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. মনসুর আলম জানান, পলেথিন ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে পঞ্চগড়ের কয়েক লাখ মানুষ। যেখানে সেখানে পলেথিন ফেলে দেয়া হচ্ছে। পৌরসভার ড্রেণগুলোতে পলেথিন ফেলার কারণে সেগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্ষাকালে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। দুষিত পানির মাধ্যমে মইক্রোপ্লাষ্টিক ছড়িয়ে পড়ছে জেলা শহরে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, পলেথিনের ব্যবহার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। হাতে গোনা অসাধু কয়েকজন ব্যবসায়ি সারা জেলায় পলিথিন ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তারা পৌর এলাকা সহ গ্রামের হাটবাজারে দোকানে দোকানে গিয়ে পলেথিন বিক্রী করে। প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনেই তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এব্যপারে এই দুই সংস্থারও কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। নিষিদ্ধ ওই পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে পঞ্চগড়ের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
বিভিন্ন মাধ্যমে পঞ্চগড় শহরের ৫ জন পলেথিন ব্যবসায়ির নাম পাওয়া গেছে । তারা নিষিদ্ধ এই ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা শিকারও করেছেন। পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করে তারা বলেন এই ব্যবসা সারা দেশে চলছে। ঢাকারগুলো আগে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেন। তাহলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। পলেথিন ও প্লাষ্টিক ব্যবসায় জড়িত মুরাদ মশলাঘরের স্বত্বাধিকারী জনাব আলী অভিযোগ করে জানান আমরা ২/৩ কেজী পলেথিন বিক্রী করি। বড় ব্যবসায়ি হচ্ছেন হুক্কু মিঞা। সে সারা জেলায় পলেথিন সরবরাহ করেন। জনাব আলীর অভিযোগ অস্বীকার করে আলমগীর স্টোরের সত্বাধিকারী হুক্কু মিঞা বলেন, সোনালী ব্যাংকের সামনে জনাব আলী নিজে এবং নাসিরুল, ছবি, আনোয়ার, রাব্বি হোসেন, আশরাফুল ট্রাকে করে পলেথিন আনেন । আমার ব্যাপারে ওরা মিথ্যা বলেছে। আমি অল্প সল্প বিক্রী করি।
পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে নিষিদ্ধ পলেথিন ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন তারা। ইতোমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়িকে জড়িমানাও করা হয়েছে।
পঞ্চগড় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইউসুফ আলী জানান, আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়িকে জড়িমানা করেছি। সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ চলছে।
0 coment rios: