বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে ৬ বছর ধরে শিকলবন্দী মিলনের জীবন, নিরুপায় পরিবার


মজিবর রহমান শেখ: ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকায় ৬ বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন যাপন করছেন  মিলন হক। পায়ে শিকল আর ছোট ছাউনির ভেতরে পুরো দুনিয়ার স্বাদ পেতে হয় তাকে। কথা ছিলো পড়াশোনা করে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন মিলন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরুতে পারেননি তিনি। জীবনের ৩০টি বছর পার হয়েও জীবনের কোন মানে খুঁজে পাননি তিনি। অপরিচিত জনের সাথে আচরণ স্বাভাবিক হলেও নিজের পরিবারের লোকদের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করেন তিনি। অনেক সময় নানা ভাবে বিড়ম্বনায় ফেলে স্থানীয়দের। পরিবারে উপার্জনক্ষম মানুষ না থাকায় হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুজিশহরে মফিজ উদ্দীন ও শাহেদা বেগম দম্পত্তির সন্তান মিলন হক। ৯ বছর বয়সে গলায় টিউমার ধরা পড়ে মিলনের। চিকিৎসা নেওয়ার পরে কিছুদিন সুস্থ হলেও আবার শুরু হয় অসুস্থতা। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে এ অসুস্থতা। এখন শিকলে বেধে না রাখলে নানা ভাবে মানুষকে হেনন্থায় ফেলে। একদিকে স্বামীর অসুস্থতা অন্যদিকে ছেলের শিকলবন্দী জীবন যাপন নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করেন বৃদ্ধা শাহেদা বেগম। নিজের অসুস্থতা থাকা সত্বেও বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যান তিনি। স্বামী ব্রেন স্টোক করে প্যারালাইস, ছেলে শেকলে বাধাঁ। স্বামী সন্তানের মুখের খাবার জোগার করবেন না চিকিৎসা করাবেন এই দোটানায় চলছে শাহেদা বেগম। মানুষের বাসায় কাজ করে সকলের দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থাই করতে পারছেন তিনি। চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই তাই স্বাম ও সন্তানের এমন খারাপ অবস্থা দেখতে হচ্ছে তাকে। এখন সন্তানের চিকিৎসার জন্য মানুষের দাড়ে দাড়ে ঘুরছেন মা। প্রতিবেশী আজহারুল ইসলাম বলেন, তাদের পরিবারটা চলতে পারছেনা। তার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে পড়ে আছে। ছেলেটাও শিকলে বন্দি হয়ে রয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যে টুকটাক সহযোগীতা করি। কিন্তু মিলনের প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। তা না হলে পরিবারটার জন্য সামনে আরও কঠিন হয়ে দাড়াবে।

মিলনের মা শাহেদা বেগম বলেন, ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই আমাদের। মিলনের বাপ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। সুস্থ থাকলে উনি কাজে যেত। আমি একদিন গেলে আবার অসুস্থ হয়ে যাই। এখন মিলনের চিকিৎসা না হলে আমাদের পরিবারটা কিভাবে চলবে। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের পাশে কেউ না দাড়ালে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম। এমন হলে আসলে অনেক দু:খজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: