রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪

দোল পুর্ণিমার ইতিহাস রঙের উৎসবে মেতে উঠুন আপনিও


স্বপন কুমার রায় : বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন মানেই কিন্তু নিজেকে নতুন রঙে রাঙিয়ে নেওয়ার পালা।

ঠিক গ্রীস্মের আগেই শুরু হয়ে গেছে দোল পুর্ণিমার আয়োজন আবির খেলার উত্তেজনা।তবে সারা বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষে যা পরিচিত হোলি নামে দোল পুর্ণিমা হিসাবে আয়োজিত হয়।এসময় বাড়িতে বাড়িতে শুর হয় সত্যনারায়ন পুজার আয়োজন।

 দোল উৎসব পালিত হয় পূর্ণিমার পুণ্যতিথিতে। কথিত আছে, এই পূর্ণিমা লগ্নেই জন্ম হয় চৈতন্য মহাপ্রভুর। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে দোল পূর্ণিমার আয়োজন একটি অন্যতম কারণ।  আসলে নবদ্বীপের বৈষ্ণব ধর্মের এই প্রবক্তার রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রেম ধর্মীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছিল আত্মিক পর্যায়ে। শ্রী হরির প্রতি তাঁর প্রেম ছিল জগৎবিখ্যাত। আর এই শ্রী হরি ছিলেন কৃষ্ণের এক অবতার।

দৈতরাজ হিরণ্যকিকশিপুর এর কাহিনি সকলে জানেন, ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুলে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ড থেকেও অক্ষত থেকে যায় আর ক্ষমতার অপব্যবহারে হোলিকার বর নষ্ট হয়ে যায় এবং হোলিকা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, এই থেকেই হোলি কথাটির উৎপত্তি।কৃষ্ণ ব্যতীত কিন্তু আবার হোলি অসম্পূর্ণ। দ্বারকা, শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম লীলাভূমিতে কিন্তু হোলি পালন করা হয় প্রায় ১৬ দিন ধরে। বঙ্গদেশে কিন্তু প্রথমদিন দোল পূর্ণিমা, আর তারপরের দিনেই অনুষ্ঠিত হয় হোলি। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রং খেলার এই উৎসবের প্রচলন হয়েছিল স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের হাত ধরেই। শ্রীরাধা এবং তাঁর গোপিনীদের সঙ্গে রং খেলা শুরু করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ এই তিথিতেই, তাঁর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবেই। ভক্তকূলেও তাই এই রং খেলার প্রচলন প্রচুর জনপ্রিয়তা পায় এবং হোলি হয়ে ওঠে শ্রীকৃষ্ণের আধারে রং ও আবির খেলার দিন। বাড়িতে বাড়িতে দোল পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন করা হয় পরিবারের সকলের মঙ্গল কামনায়। নারায়ণ, শ্রীকৃষ্ণের আর এক অবতারের পূজাতে উৎসর্গ করা হয় আবির। বিগ্রহকে শ্রদ্ধাভরে রং মাখিয়ে তারপর দু'দিন ধরে চলে রংকেলির এই বসন্ত উৎসব।সকলে রঙে মাতোয়ারা।  দোল মানে কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে দোলনার কথা, যে দোলনায় বসা রাধা কৃষ্ণের ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত। রাধা এবং কৃষ্ণের ছবি বা বিগ্রহ পালকিতে করে বা ছোট ছোট দোলনায় চড়িয়ে, ফুল মালা সাজিয়ে ভক্তরা ভক্তি ভরে সেই নিয়ে এই পূর্ণিমার লগ্নে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। রথ যাত্রার মতো, দোলনায় চেপে যাত্রা করেন রাধা ও কৃষ্ণ। ভক্তিগীতির সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের দোলনায় দুলিয়ে দুলিয়ে নিয়ে এগোন রাধা কৃষ্ণের জুড়িকে। নাচ গানের সঙ্গে সঙ্গে নানা রঙের আবিরে রেঙে ওঠে চারপাশ। পথচলতি সকল ভক্ত এবং দর্শক হয়ে ওঠেন দোলপূর্ণিমায় দোলযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কালক্রমে দোল পূর্ণিমা, হোলি, বসন্তউৎসব একসঙ্গে মিলে মিশে হয়ে উঠেছে বারো মাসের তেরো পার্বণের আর একটি পার্বণে। ধর্মীয় বা তাত্ত্বিক তাৎপর্যের বাইরে গিয়ে এই দুইদিন ব্যাপী উৎসব হয়ে উঠেছে মানুষে মানুষে মিলনের, প্রেমের উৎসব। ঠিক যেমন ছিল রাধা কৃষ্ণের হোলিখেলার উদ্দেশ্য, যেমন ছিল শ্রীহরির বন্দনায় বিভোর চৈতন্য মহাপ্রভুর স্বপ্ন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: