শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪

গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও অস্র মামলা

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় টেলিফোন প্রতিকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী সিদ্দিকের চাচাতো ভাই ও তার সমর্থক রিয়াজুল শেখ নিহতের ঘটনায় আনারস প্রতিকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।   গোলাম মোস্তফা (৫২), তার স্ত্রী ওম্মে সালমা ডালিয়া (৪০), তার ভাই গোলাম মাওলা (৫৫), গোলাম রহমানসহ (৪২) ১১ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন পঞ্চসার ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী সিদ্দিক।     মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মুসা (৪৫), মাসুদ (৪৬), মোস্তফা (৫৬), হুমায়ূন (৪৮), রাসেল পোদ্দার (৫৫), রমজান (৪৫) ও আক্তার খাঁন (৫০)।    জানা যায়, গত বুধবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতে আলী সিদ্দিক একটি অভিযোগ করেন। তার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা রুজু করতে সদর থানার ওসিকে আদেশ দেন সিনিয়র চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ক্ষমতাপ্রাপ্ত) আরফাতুল রাকিব। সেই সাথে আগামী ১৫/১২/২০২১ তারিখের মধ্যে মামলা অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। যার সি আর মামলা নং- ৪৭৩/২০২১।  আদালতের নির্দেশ মোতাবেক গত বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। যার নং-০৯, তারিখ- ০২/১২/২০২১।     গোলাম মোস্তফাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৪৩/১৪৯/৪৪৭/৪৪৮/৪২৭/৩৮০/৩০২/১১৪/৩৪ ধারায় মামলা করা হয়।  মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৮ নভেম্বর পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে এজাহারে অভিযুক্ত আসামিরা নিহত রিয়াজুল শেখের বাড়িতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দা, লাঠি, লোহার রড, হকিস্টিক, বন্দুকসহ অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় ঘরে থাকা ফ্রিজ, টেলিভিশন, খাট, সোকেজসহ অন্যান্য ফার্ণিচার ভাঙ্চুর করে আলমারীতে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণসহ মোট ২৬ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।  নিহত রিয়াজুল শেখ লুটপাটে বাঁধা দিলে অভিযুক্ত ওম্মে সালমা ডালিয়ার হুকুমে গোলাম মোস্তফার বন্দুকের বাট দিয়ে স্বজোরে কয়েকটি বারি মেরে মারাত্বক জখম করে। এ সময় তার সাথে থাকা অভিযুক্তরা তাকে পায়ের নিচে ফেলে পাড়াইয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে চলে যায়। পরে রিয়াজুল শেখকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর ফরিদউজ্জামান জানান, মামলার আসামিরা আত্মগোপনে আছে। বিভিন্ন সময় তারা লোকেশন পরিবর্তন করেছে।  কয়েকবার গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তারা দেশের বাইরে যেতে পারেনি। যে কোনো সময় আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। 



সম্প্রতি পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গোলাম মোস্তফা পাশ করার পর নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল, মাদক দ্রব্য ও অস্র বিক্রির সিন্ডিকেট বেড়েই চলেছে। পঞ্চসার ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এখন গোটা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরী ও জেলার প্রতিটি শহর ও শহরতলীতে ছড়িয়ে পরেছে পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পরিনত হচ্ছে মাদক ও অস্র বিক্রির হাটে।


কেউ পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই তার বিরুদ্ধে চলে মামলা-হামলাসহ গুম-খুনের মতো ঘটনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রভাবশালী চোরম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে পরতে হয়েছে হামলা-মামলার স্বীকারে। এমনকি অনেককে তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনি দিয়ে রাতের আধারে ধরে নিয়ে গিয়ে তার নিজ বাগান বাড়িতে হাত-পা বেধে মধ্যযুগিও কায়দায় বেদম প্রহার করার কথাও এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাড়িয়েছে। এক কথায় এখন গড ফাদার বনে গেছেন পঞ্চসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।

এর আগেও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একসময়ের শীর্ষ অস্র ব্যবসায়ী ও ত্রাস গোলাম মোস্তফা কে তার বাসা থেকে অস্র সহ আটক করেছিল মুন্সিগঞ্জ ডিবি পুলিশ। মুন্সিগঞ্জ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছিলেন। সদরের মুক্তারপুর থেকে গোলাম মোস্তফা কে আর্টক করা হয়। 

এসময় তার মালিকানাধীন সূতা তৈরির ফ্যাক্টরি কিংফিশার ফাইবার এর ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী অস্র কয়েক রাউন্ড গুলি ও কয়েক কোটি টাকার অবৈধ কারেন্ট জাল উদ্ধার করা হয়। পরে ঐ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি অস্র মামলা দায়ের করেন।


কিছুদিন আগে মুন্সীগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিচারক রোকেয়া রহমান তা নামঞ্জুর করে। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইনচার্জ জামাল উদ্দিন জানান, অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনের অভিযোগে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে আসামি করে বিভিন্ন সময়ে পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। পাঁচটি মামলার মধ্যে চারটির বাদী নৌপুলিশ ও একটির কোস্টগার্ড। ওই পাঁচ মামলায় রবিবার মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। ২ কোটি ৫১ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধারের ঘটনায় গোলাম মোস্তফাকে প্রধান আসামি করে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করে নৌ পুলিশ। মামলা নং ৫৪ (০৮) ২২ ও ৫৫ (০৮) ২২। তার নামে একাধিক হত্যা মামলাও রয়েছে। অজ্ঞাত কারণে সে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেলেন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: