এস এম রেদ্বোয়ান, চুয়াডাঙ্গা অফিস:মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট মাঠে ১৭ বিঘা জমির কলা গাছ ও চোখতোলা মাঠে কৃষকের প্রায় দুই বিঘা জমির তামাক গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাঠের উঠতি ফসল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ফসল কর্তনের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত পুলিশের কোনো পদক্ষেপ না দেখতে পেয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
তবে পুলিশের কর্মকর্তা বলছেন তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. রহিদুল ইসলাম গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট মধ্যপাড়ার মাঠে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে লোন, ধার ও সুদের ওপর টাকা নিয়ে ১৭ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেন।
প্রায় এক মাস আগে রাতের আঁধারে ৬ বিঘা জমির কলা গাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এক মাস পরে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় একই মাঠে আবারও তার ১১ বিঘা জমির কলা গাছ কেটে তছরুপ করে। ১৭ বিঘা জমির কলা গাছ কেটে দেওয়ায় আনুমানিক ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দাবি এই কৃষকের। কৃষক রহিদুল ইসলাম বলেন, গাংনী থানা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে আমি যাচ্ছি পুলিশ কিছুই করছে না। প্রথম যখন ৬ বিঘা জমির কলাগাছ কাটে। তখন থানায় গেছি দুইদিন। স্থানীয় ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পে গেছি একাধিকবার। অভিযোগ করেছি। কিন্তু অভিযোগের ফলাফল কিছুই পাইনি। অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ দুই দিনই এসেছে। তারা আশ্বাস দিয়েছিল সুষ্ঠু বিচার হবে। শুধু আশ্বাসই দিয়েছে ফল পাইনি। এ বিষয়ে পুলিশের কোনো পদক্ষেপ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলা চাষি রহিদুল ইসলামের চাচাত ভাই জামান আলী বলেন, ৬ বিঘা জমির কলা ক্ষেত কর্তনের পরে আমরা বিচার চেয়েছি পাইনি। এই ১১ বিঘা জমির কলা গাছ কর্তনের কী বিচার পাবো, প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের তো প্রশাসন ছাড়া যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে বিচারের জন্য গেছি। কিন্তু সেখানে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। প্রথম দফায় প্রশাসন পদক্ষেপ নিলে দ্বিতীয় দফায় এই ১১ বিঘা জমির কলা ক্ষেতের ক্ষতিটা হতো না। স্থানীয় কৃষক সাজাহান আলী বলেন, গত মাসে আমারও এক বিঘা জমির কলা গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ কারণে অন্য কৃষকরা আতঙ্কে আছেন। এ ঘটনায় জড়িত যারা তাদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন এই কৃষক।
তিনি আরও বলেন, এর আগের ঘটনায় প্রশাসন কোনো দুর্বৃত্তদের ধরতে না পারায় আমরা হতাশ।
মো. রহিদুল ইসলামের চাচাতো ভাই জামান আলী বলেন, এর আগে কলা গাছ কেটে তছরুপ করেছিল সে বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছিলাম প্রশাসনের কাছে কিন্তু আশানুরূপ কোনো ফলাফল আমরা পাইনি। প্রশাসন এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি এতে আমরা হতাশ। আবারও ১২ বিঘা জমির কলা গাছ কেটে তছরুপ করেছে। আমরা কার কাছে যাব কার কাছে গেলে বিচার পাব।
বামন্দী ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কমল জানান, ফসলের ওপরে শত্রুতা কোনোভাবে মানা যায় না। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এদিকে শনিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় একই উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের চোখতোলা মাঠে ধর্মচাকি গ্রামের ফজলুল হকের দেড় বিঘা ও রিপন আলীর ১৪ কাঠা জমির উঠতি তামাকের গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ফজলুল হক ও রিপন আলীর প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা। এ ঘটনায় ধর্মচাকি গ্রামের তিনজনকে বিবাদী করে গাংনী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ফজলুল হক। আসামিরা হলেন- ওই গ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে আব্দুল কাদের, মৃত ফাকের আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস ও মৃত ইয়াছিন আলীর ছেলে মঙ্গল আলী।
এসব বিষয় গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, মানুষের সঙ্গে মানুষের শত্রুতা থাকতে পারে। এজন্য ফসলের ক্ষেত বিনষ্ট করতে হবে। এটা খুবই দুঃখজনক। মাঠে ঘটনাগুলো ঘটছে, যেখানে পুলিশের ডিউটি সম্ভব নয়। এছাড়া কৃষকরাও পাহারা দিতে পারেন না। ইতোপূর্বে ফসল কর্তনের ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। সে মামলার তদন্ত চলছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে তারা কারো নামে অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ দায়ের করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তকরণে আমরা চেষ্টা করছি।
0 coment rios: