বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাবি শিক্ষার্থী ফিরোজের মৃত্যু ও চিরকুট নিয়ে ‘রহস্য’

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগের এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফিরোজ কাজী। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিজয় একাত্তর হলের ছাদ থেকে পড়ে যান তিনি। পরে সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

তবে ফিরোজের মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। গভীর রাতে হলের কোন তলায় ছিলেন ফিরোজ? পা পিছলে পড়ে গেছেন নাকি কেউ ধাক্কা দিয়েছে? নাকি আত্মহত্যা করতে লাফ দেন তিনি? এসব প্রশ্ন নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, এরইমধ্যে পাওয়া গেলো একটি চিরকুট। ফিরোজের পড়ার টেবিলে খাতার ওপর পাওয়া যায় এটি।

ফিরোজের প্যাড খাতায় দুটি প্যারায় দুটি ভিন্ন কথা লেখা ছিল সময় উল্লেখ করে। প্রথম চিরকুটে লেখা-  ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনও অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ। (ফিরোজ রাত: ১১টা ৩)।’

পরের প্যারায় লেখা- “আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইলো মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ৮****। আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম। আমারে লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনোরূপ আইনি মামলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক! শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না। (ফিরোজ রাত: ১১টা ৫)।”

এই চিরকুটের লেখার সঙ্গে ফিরোজের হাতের লেখার মিল রয়েছে বলে জানান তার বন্ধুরা। তবে ফিরোজের মরদেহ নিতে আসা বড় ভাই জানান, এটি ফিরোজের হাতের লেখা নয়।

ফিরোজের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে মরদেহের পোস্টমর্টেম করা হয়। এরপর দুপুরে নিজ জেলা গোপালগঞ্জের উদ্দেশে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সঙ্গে রয়েছে ফিরোজের কলেজের ও এলাকার বন্ধু, একই হলের শিক্ষার্থী রাজু শেখ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘কয়েক দিন ধরেই একটা সম্পর্ক নিয়ে ফিরোজের ঝামেলা হচ্ছিল। রিলেশন অনেক আগে থেকেই ছিল। মেয়েটা এই রিলেশনের কথা কারও কাছে প্রকাশ করতে দিতো না। ছেলের বাড়ি থেকে বাবা, মা, চাচা, ভাই, বোন দফায় দফায় দেখা করতে এসেছেন। তবে মেয়ে দেখা করতে নারাজ ছিল। ফিরোজের পরিবার তাদের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছিল যথাসম্ভব।’রাজু আরও বলেন, ‘ফিরোজ ইন্ট্রোভার্ট ছিল, কারও সঙ্গে তেমন কিছু শেয়ার করতো না। নিজের মতো চুপচাপ থাকতো। ডিপার্টমেন্টের বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা শেয়ার করতো বলে জেনেছি।’

ফিরোজের ডিপার্টমেন্টের বন্ধু আতাউর রহমান অপু জানান, ‘একটা মেয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি তার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সম্পর্ক সাময়িক ছেদ করতে চেয়েছিল। ফিরোজ মেয়ের সুসময় এবং দুঃসময়ে পাশে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু ফিরোজের নম্বর ব্লক করে দেয় সে। এরপরও অন্যজনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল ফিরোজ। এ নিয়ে ওদের দূরত্ব আরও বেড়ে যায়। তবে ওদের সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টির সুযোগ ছিল না। সরকারি কাগজে (কোর্ট ম্যারেজ) সাইন করা সম্পর্ক ছিল ওদের।’

কোর্ট ম্যারেজের কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে অপু জানান, ‘ফিরোজের মোবাইলে রয়েছে। ও আমাকে গত পরশু এসব দেখিয়েছে।’মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতটুকু এভিডেন্স আমাদের কাছে আছে, এটা একটা সুইসাইড। কারণ, তার সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। সে যখন রুম থেকে বের হয়েছে, তার মোবাইল, মানিব্যাগ, সুইসাইড নোট রুমে রেখে এসেছে।’সার্বিক বিষয়ে জানতে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। সুত্রঃ আমাদেরসময়.কম


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: