ইবিতে সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) এক শিক্ষার্থীকে কয়েক দফায় র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থীর নাম তাহমিন ওসমান। তিনি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ করলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান তদন্ত কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলিনা নাসরিন, আইন প্রশাসক প্রফেসর ড. আনিচুর রহমান, সহকারী প্রক্টর মিঠুন বৈরাগী এবং উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে তাদের উপাচার্য বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর ইমেইলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার বরাবর র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। সেসময় অভিযোগপত্র অসম্পূর্ণ হওয়ায় তাকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে অভিযোগ করতে বলা হয়।
এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ছয় পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় শুভ, মিজানুর ইমন, আকিব, পুলক ও সাকিব নামে পাঁচজন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা সবাই হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ঐ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন (২ সেপ্টেম্বর) ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের পরেসহ ৩ ও ৫ সেপ্টেম্বর মোট তিনদিন র্যাগিং ও খারাপ আচরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম দিন ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের র্যাগিং বিরোধী মাইকিং চলাকালীন তাকে র্যাগিং করা হয় বলেও অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়। পরে তাকে সন্ধ্যায় ডেকে ১০ রকম হাসি দিতে বলা হয়। ভুক্তভোগী অসম্মতি জানালে তাকে সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে আটকে রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়ে ঐ শিক্ষার্থী মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
পরে ৩ সেপ্টেম্বর বিভাগের ক্রিকেট খেলায় দেরী করে আসায় তার সাথে অসদাচরণ করা হয়। পরবর্তীতে ৫ সেপ্টেম্বর বিভাগের সিনিয়রদের ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট না পাঠানোর কারণে তাকে বকা দেয়া হয় এবং ব্যাচ আউট অর্থাৎ বিভাগের ছাত্র হিসেবে কোনো সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়। এসময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয়। এবিষয়ে ভুক্তভোগী তাহমিন ওসমান বলেন, আমি চাইনা আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা আর কোনো শিক্ষার্থীর সাথে ঘটুক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিন্ধান্ত নিবে সেটাই মেনে নেবো তবে জড়িতরা যেনো অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। আমার মধ্যে কিছুটা নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা শওকত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাদের সিন্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। এবিষয়ে অভিযুক্ত শুভ মুঠোফোনে বলেন, এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ। এটার জন্য একজন শিক্ষার্থীর জীবনে অনেক প্রভাব পড়তে পারে। আমি হাইওয়েতে রয়েছি। আমার আঙ্কেল অসুস্থ, ঢাকা গিয়েছিলাম ক্যাম্পাসে ফিরছি। ১০ মিনিট পরে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটির বিষয়টি জেনেছি তবে চিঠি এখনো হাতে পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং ভিজিল্যান্স কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, র্যাগিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সনীতি অনুসরণ করছি। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগের চেয়ারম্যান, হলের প্রভোস্ট, ইবি থানা ও একজন সহযোগী প্রক্টরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সূত্র: আমাদের সময়.কম
0 coment rios: